গাজায় ইসরায়েলি অভিযান: ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ?

by Natalie Brooks 44 views

Meta: গাজায় ইসরায়েলি স্থল অভিযান কি ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ভাঙতে পারবে? এই অভিযানের পেছনের কারণ, কৌশল এবং সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে আলোচনা।

ভূমিকা

গাজায় ইসরায়েলি স্থল অভিযান (Israeli ground operation in Gaza) একটি জটিল এবং সংবেদনশীল বিষয়। এই অভিযান ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ভাঙতে পারবে কিনা, তা আলোচনার আগে পরিস্থিতি এবং অভিযানের প্রেক্ষাপট বোঝা জরুরি। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতের প্রেক্ষাপটে গাজার পরিস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এই নিবন্ধে, আমরা গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের কারণ, কৌশল এবং সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

গাজা ভূখণ্ডটি ফিলিস্তিনের একটি অংশ, যা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। হামাস একটি ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন, যারা গাজাStrip নিয়ন্ত্রণ করে। ইসরায়েল হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে এবং প্রায়শই গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট হামলার জবাবে সামরিক অভিযান চালায়। এই সংঘাতের কারণে গাজার সাধারণ মানুষ চরম মানবিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে। আমরা দেখব এই অভিযানের ফলে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার ওপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে।

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের কারণ

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রধান কারণগুলো হলো ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হামাসের রকেট হামলা প্রতিহত করা। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ হামাসের রকেট হামলাকে তাদের নাগরিকদের জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে থাকে। হামাসের রকেট হামলার পাশাপাশি, ইসরায়েল অভিযোগ করে যে হামাস গাজায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি এবং মজুত করছে, যা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। ইসরায়েল মনে করে, হামাসের সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করতে অভিযান চালানো জরুরি।

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা। হামাস গাজার নিচে সুড়ঙ্গের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা ইসরায়েলের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। ইসরায়েল মনে করে, এই সুড়ঙ্গগুলো ব্যবহার করে হামাস ইসরায়েলের ভেতরে হামলা চালাতে পারে এবং সৈন্যদের অপহরণ করতে পারে। এই সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা ইসরায়েলের সামরিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করতে ইসরায়েল কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

অভিযানের রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। ইসরায়েলের সরকার তাদের নাগরিকদের কাছে নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রায়ই দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কারণেও ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান চালায়। এছাড়া, ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন, গাজায় সামরিক অভিযান চালালে হামাসের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাবে, যা ভবিষ্যতে ইসরায়েলের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে। ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই অভিযানের কী প্রভাব পড়তে পারে, সেটিও আমরা দেখব।

অভিযানের কৌশল এবং প্রস্তুতি

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় স্থল অভিযানের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। অভিযানের কৌশল (Operation strategy) মূলত তিনটি প্রধান স্তরে বিভক্ত: আকাশপথে হামলা, স্থলপথে অভিযান এবং নৌ blockade। প্রথমত, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গাজার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়, যার মধ্যে হামাসের সামরিক স্থাপনা, রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক অন্যতম। এই বিমান হামলার লক্ষ্য হলো হামাসের সামরিক সক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া এবং তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করা। আকাশপথে হামলার পাশাপাশি, ইসরায়েলি নৌবাহিনী গাজার জলসীমায় অবরোধ (blockade) তৈরি করে, যাতে হামাসের কাছে কোনো প্রকার অস্ত্র বা সাহায্য পৌঁছাতে না পারে।

স্থলপথে অভিযানের ক্ষেত্রে, ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজার ভেতরে প্রবেশ করে হামাসের ঘাঁটি এবং সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করে। এই অভিযানে ইসরায়েলি পদাতিক বাহিনী, ট্যাংক এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজার শহর এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে প্রবেশ করে হামাসের যোদ্ধাদের সাথে সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত হয়। এই স্থল অভিযান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে হামাসের যোদ্ধারা লুকিয়ে থাকতে পারে এবং গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ চালাতে পারে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে, যার মধ্যে অন্যতম হলো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া।

অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার border-এ সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করে। এছাড়া, তারা রিজার্ভ সৈন্যদের ডেকে পাঠায় এবং গাজার কাছাকাছি এলাকা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবে সামরিক মহড়া চালায় এবং সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে। এই প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপগুলো ইসরায়েলের অভিযানের গুরুত্ব এবং ব্যাপকতা প্রমাণ করে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই প্রস্তুতি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা আলোচনা করা প্রয়োজন।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের স্বরূপ

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের মুখে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ (Palestinian resistance) একটি জটিল বিষয়। হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের মূল কৌশল হলো গেরিলা যুদ্ধ এবং রকেট হামলা। হামাস যোদ্ধারা গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে লুকিয়ে থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা সুড়ঙ্গ এবং গোপন পথ ব্যবহার করে ইসরায়েলি সৈন্যদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলের দিকে রকেট এবং মর্টার হামলা চালায়, যা ইসরায়েলের শহরগুলোতে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্থানীয় জনগণের সমর্থন। গাজার অধিকাংশ মানুষ ইসরায়েলের অভিযানের বিরোধিতা করে এবং হামাসসহ অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করে। এই জনসমর্থন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মনোবল বাড়ায় এবং তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করে। তবে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে গাজার সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বহু মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে এবং খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে ভুগছে। এই মানবিক সংকট ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের ওপর একটি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ কেবল সামরিক প্রতিরোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ফিলিস্তিনিরা বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ উপায়েও তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে। তারা বিক্ষোভ, মিছিল এবং ধর্মঘটের মাধ্যমে ইসরায়েলের নীতিগুলোর বিরোধিতা করছে। ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীরা আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরছেন এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। এই শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ ফিলিস্তিনিদের মনোবল ধরে রাখতে এবং তাদের দাবি আদায়ে সাহায্য করছে।

প্রতিরোধের দুর্বলতা এবং চ্যালেঞ্জ

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের কিছু দুর্বলতা এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সামরিক সক্ষমতা ইসরায়েলের তুলনায় অনেক কম। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, যাদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রযুক্তি রয়েছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের কাছে হালকা অস্ত্র এবং রকেট ছাড়া তেমন কিছু নেই। এই সামরিক বৈষম্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের জন্য একটি বড় বাধা। এছাড়া, গাজার ওপর ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

দ্বিতীয়ত, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ রয়েছে। হামাস এবং ফাতাহর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে বাধা সৃষ্টি করছে। এই দুটি প্রধান ফিলিস্তিনি দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে প্রায়ই সহিংস ঘটনা ঘটে, যা ফিলিস্তিনিদের দুর্বল করে দেয়। রাজনৈতিক বিভেদের কারণে ফিলিস্তিনিরা একটি শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না। এই বিভেদ দূর করতে না পারলে ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।

তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সমর্থন না পাওয়াও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক দেশ ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তারা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি তেমন মনোযোগ দেয় না। এছাড়া, পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করা হয়, যার কারণে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন দুর্বল হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ইসরায়েলের চাপ মোকাবেলা করা কঠিন।

অভিযানের সম্ভাব্য ফলাফল

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের সম্ভাব্য ফলাফল (Possible outcomes of the operation) নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। একটি সম্ভাব্য ফলাফল হলো, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামাসের সামরিক সক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারবে। যদি ইসরায়েল হামাসের রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র, সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক এবং অস্ত্র মজুত করার স্থানগুলো ধ্বংস করতে পারে, তাহলে হামাসের পক্ষে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। এর ফলে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা কিছুটা হলেও বাড়বে। তবে, হামাস একটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন, তাই তাদের সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হয়তো সম্ভব হবে না।

আরেকটি সম্ভাব্য ফলাফল হলো, গাজায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে। ইসরায়েলি অভিযানের কারণে বহু মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে এবং খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে ভুগছে। যদি এই মানবিক সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে গাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু ইসরায়েলের অবরোধের কারণে তাদের কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে। গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা আরও বাড়তে পারে। ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে যদি বহু বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়, তাহলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি ক্ষোভ বাড়বে। এই ক্ষোভ ভবিষ্যতে আরও সহিংসতা এবং সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা কমাতে হলে, ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে হবে এবং তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব (Long-term impacts of the operation) সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এই অভিযানের ফলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। যদি ফিলিস্তিনিরা মনে করে যে ইসরায়েল তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে না, তাহলে তারা শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি হবে না। এর ফলে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, উভয় পক্ষকে ছাড় দিতে হবে এবং একটি ন্যায্য সমাধানে পৌঁছাতে হবে।

অভিযানের ফলে গাজার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যেতে পারে। যদি হামাসের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে গাজায় নতুন করে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে। বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে, যা গাজার পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। গাজার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্য জরুরি এবং একটি শক্তিশালী সরকার গঠন করা প্রয়োজন।

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, তাহলে বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের সমালোচনা করবে। এর ফলে, ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে পারে এবং তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইসরায়েলের উচিত আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানো এবং গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

উপসংহার

গাজায় ইসরায়েলি অভিযান একটি জটিল এবং সংবেদনশীল বিষয়। এই অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ভাঙবে কিনা, তা বলা কঠিন। তবে, অভিযানের সম্ভাব্য ফলাফল এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে, উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে হবে। গাজার মানবিক সংকট মোকাবেলা করতে হলে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে হবে। ভবিষ্যৎ সংঘাত এড়াতে হলে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়কেই সহনশীল হতে হবে এবং একে অপরের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের মূল উদ্দেশ্য কী?

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হামাসের রকেট হামলা প্রতিহত করা। ইসরায়েল হামাসের সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করতে এবং তাদের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে চায়। এছাড়া, ইসরায়েল মনে করে যে গাজায় সামরিক অভিযান চালালে হামাসের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাবে, যা ভবিষ্যতে ইসরায়েলের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রধান কৌশলগুলো কী কী?

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রধান কৌশলগুলো হলো গেরিলা যুদ্ধ এবং রকেট হামলা। হামাস যোদ্ধারা গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে লুকিয়ে থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা সুড়ঙ্গ এবং গোপন পথ ব্যবহার করে ইসরায়েলি সৈন্যদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এছাড়া, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলের দিকে রকেট এবং মর্টার হামলা চালায়।

গাজায় মানবিক সংকটের কারণ কী?

গাজায় মানবিক সংকটের প্রধান কারণ হলো ইসরায়েলি সামরিক অভিযান এবং অবরোধ। ইসরায়েলের অভিযানের কারণে বহু মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে এবং খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে ভুগছে। গাজার ওপর ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে সেখানে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই কারণে গাজার সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

ইসরায়েলি অভিযানের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হতে পারে?

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এই অভিযানের ফলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, গাজার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যেতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি কিভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব?

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে, উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে হবে। উভয় পক্ষকে ছাড় দিতে হবে এবং একে অপরের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এই শান্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে হবে এবং একটি ন্যায্য সমাধানে পৌঁছানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে।